পাহাড়খেকোদের সঙ্গে মহেশখালী ‘দাবড়ে’ বেড়ান রেঞ্জার, ব্যবস্থা নেন না কারও বিরুদ্ধে

এস এম রুবেল •

শুক্রবার সকাল ১০টা। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বড়মহেশখালী দেবাঙ্গাপাড়া এলাকায় মাটি কেটে পাহাড় সাবাড় করছিল পাহাড়খেকোরা। মূল সড়ক ধরে ৬টি ডাম্পার ট্রাকে করে নেওয়া হচ্ছিল পাহাড়ের মাটি।

এ খবর জানানোর জন্য স্থানীয়রা ফোন করেন স্থানীয় রেঞ্জার খাঁন জুলফিকার আলীকে। কিন্তু তিনি ফোন ধরছিলেন না। একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে না পেয়ে স্থানীয়রা দ্বারস্থ হন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের। ফোন না ধরে ‘এড়িয়ে যাওয়া’ রেঞ্জার আর পাহাড়খেকোদের সহায় হতে পারলেন না! তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিকি মারমা।

সেদিন ইউএনওর চাপে অভিযানে গেলেও শুধুমাত্র একটি ডাম্পার ট্রাক আটক করে দায় সারে বনবিভাগ। কারা পাহাড় কাটছে কিভাবে কাটছে তার কোন হদিস না করে ঘটনাস্থল ছাড়ে বনবিভাগ। ফলে অনেকটা বনবিভাগের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শনিবার একইস্থানে আবারও শুরু হয়েছে পাহাড় কাটার মহোৎসব।

স্থানীয়দের অভিযোগ— পাহাড়ের গাছ-মাটি খেকোদের সঙ্গে রেঞ্জারের বিশেষ সখ্যতা। পাহাড় কাটার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রায়শই ঘুরতে দেখা যায় এই কর্মকর্তাকে। তাকে ম্যানেজ করেই সব পাহাড় সাবাড় করছে তারা। ফলে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে তথ্য দিতে স্থানীয়রা ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেন না। কখনও কখনও ফোন ধরলেও তথ্যদাতার খবর জানিয়ে বেকায়দায় ফেলেন। আবার কখনও উপর মহলের চাপে অভিযানে গেলেও চুপিসারে জানিয়ে দেন তিনি। এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি রেঞ্জার খাঁন জুলফিকার আলী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে তথ্যদাতারা বলেন, বনবিভাগের লোকজন দেবাঙ্গাপাড়া পাড়া বাজারের রাস্তা থেকে মাটিসহ একটি গাড়ি আটক করে। ওই সময় ঘটনাস্থলে আরও ৩টি গাড়ি পাহাড় কেটে মাটি ভরছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে না গিয়ে একটি গাড়ি নিয়ে চলে আসে। তারা চলে আসার পরেও ডাম্পার গাড়িতে করে মাটি পরিবহণের কাজ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রেঞ্জার জুলফিকার আলী বলেছেন, জনবলের অভাবে সেদিন শুধু একটি ট্রাক ধরতে পেরেছেন তিনি। তবে আটক ট্রাক ও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানান নি তিনি।

এ প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমার আপনাকে পছন্দ না, আপনি বনবিভাগের বিরুদ্ধে নেগেটিভ নিউজ করেন সবসময়। বনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাই আপনাকে অনেক আগেই ব্লক করেছি। এখন এই নাম্বারও ব্লক করবো। আপনারা সাংবাদিকরা যা পারেন লিখেন। দেখি আমার কি করতে পারেন।’

  • ‘আপনারা সাংবাদিকরা যা পারেন লিখেন। দেখি আমার কি করতে পারেন।’

উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করার কোন এখতিয়ার রেঞ্জার রাখেন না। পাহাড় কাটা সংক্রান্ত তথ্যগুলো আমাকে পাঠান, আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিকি মারমা বলেন, পরিবেশ রক্ষা সকলের দায়িত্ব। যারা পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এসময় তিনি সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয়দের অনুরোধ জানান।